শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন

শেষ মুহূর্তে রং তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

শেষ মুহূর্তে রং তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)

সনাতন ধর্মালম্বীদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আসন্ন দুর্গাপূজাকে ঘিরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করেছেন বিভিন্ন প্রতিমা।

ইতোমধ্যে এ উপজেলার বেশির ভাগ প্রতিমা তৈরির অবকাঠামোর কাজ শেষ। এখন দেবীদূর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে দিনরাত রং-তুলির কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পীরা।

মন্দির জুড়ে আলোকসজ্জা ও পূজা আয়োজনের কোন কমতি নেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। চলতি বছর উপজেলার প্রায় ৭৭টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবু নীরেন্দ্রনাথ রায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট কালীমন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। তাদের যেন দম ফেলার সময় নেই! পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করছে গৃহবধূ বাদ পড়েনি শিশু ও কিশোরাও। কেউ কেউ খড়, কাঠ, সুতা দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করছেন কেউবা আবার নিপুন হাতে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর অনিন্দ্য সুন্দর রূপ। প্রতিমার অবকাঠামো তৈরি শেষে এখন চলছে রং তুলির নিপুন হাতের কারুকাজ। রং তুলির কারুকাজে নিপুন হাতে সাজানো হচ্ছে প্রতিমার অপরূপ সৌন্দর্য। তবে দেবী দুর্গাকে নানা রঙ্গে রাঙ্গালেও প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিমা কারিগররা।

পঞ্জিকা মতে আগামী (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই ধর্মীয় উৎসব। এবার দেবীর আগমন ও গমন ঘোটকে (ঘোড়ায়) যার ফল ছত্রভঙ্গ অর্থাৎ (অশুভ) পৃথিবী এবার অনেকটা অস্থির ও বিশৃঙ্খলায় থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন পুজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।

প্রফেসর পাড়া দূর্গা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কারিগর বিষ্ণু কুমার বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রায় ৪০ বছর যাবত এই পেশার সাথে জড়িত। প্রতিমা তৈরির উপকরণ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য মজুরী থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

প্রতিমার মূল্য জানতে চাইলে বিষ্ণু কুমার আরও বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। গতবারের মূল্যতেই বিক্রি হচ্ছে প্রতিমা। প্রতিটি প্রতিমা ১৫ হাজার থেকে প্রায় ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে এক একটি সেট।

গয়াবাড়ি ইউপির বাবুপাড়ায় প্রতিমা শিল্পী রবীন কুমার বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণ মাটি, খড় ও সুতলি-রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো প্রতিমা তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় প্রতিমা বিক্রিও কমে গেছে।

ডিমলা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবু নীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এবার শারদীয় দুর্গাপূজা আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এই মহোৎসব। দেবীর এবার আগমন ও গমন ঘোটকে (ঘোড়ায়) যার ফল অশুভ।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এবার ডিমলা উপজেলায় ৭৭টি পূজামণ্ডপে নানা আনন্দ উৎসবে ও মহাধুমধামে পালিত হবে শারদীয় দুর্গা পূজা।

ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লাইছুর রহমান জানান, পূজায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পুলিশি টহল তো থাকবেই। তাছাড়া আনছারসহ মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক পূজা মণ্ডপগুলো নজরদারিতে রাখবে। পাশাপাশি সবকটি পূজা মণ্ডপ গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে বলেও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT